জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণ আসনের মতো সরাসরি নির্বাচন বা ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতি চালুর কথা ভাবছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ পদ্ধতিতে দেশের অনেক আসনের সীমানা পাল্টে যেতে পারে।
যে আসনগুলো নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হবে সে আসনে নারীরাই প্রার্থী হবেন। কোনো পুরুষ সেখানে প্রার্থী হতে পারবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে ওই সব আসনে নারী প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিতে হবে।
বিদ্যমান পদ্ধতি অনুসারে আসনপ্রাপ্তির অনুপাতে বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এসব আসন বণ্টন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কিছু নারীর জন্য এটি সীমাবদ্ধ থাকবে না। অন্য নারীরাও প্রার্থী হতে পারবেন। কোনো দলের ইচ্ছা বা দয়ায় নয়, জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হবেন তারা।
সাধারণ আসনের অন্য সংসদ সদস্যের মতো নিজ নির্বাচিত এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। আবার এসব আসন নির্দিষ্টও থাকবে না। ঘূর্ণায়মানভাবে এসব আসন এলাকা পাল্টে যাবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি এলাকায় এসব আসন নির্ধারণ করা হবে।
এছাড়া ও, নারীদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের সংবিধানে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়। ১৯৭৮ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩০ এবং মেয়াদ ১৫ বছরে উন্নীত করা হয়।
১৯৯০ সালের সংবিধানের দশম সংশোধনীতে মেয়াদ আবার ১০ বছরে নামিয়ে আনা হয়। সময়মতো মেয়াদ না বাড়ানোয় ২০০০ সালে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের বিলুপ্তি ঘটে।
২০০১ সালের অক্টোবরে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোনো আসন ছিল না। ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ৪৫টি নারী আসন আরো ১০ বছরের জন্য সংরক্ষণের বিধান করা হয়।
ওই বছরের ২৯ নভেম্বর সংরক্ষিত নারী আসন নির্বাচনী বিল পাস হয়। একই সঙ্গে আগের ব্যবস্থা পাল্টে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর প্রাপ্ত আসন অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসন বণ্টনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর ফলে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের জন্যই এ আসন পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষমতাসীন দলই সব আসন পেত।
এই আইন অনুসারে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এবং নবম জাতীয় সংসদের মেয়াদের প্রথম দিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন হয়।
নবম জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করা হয় এবং দশম জাতীয় সংসদের জন্য একইভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন হয়।
নবম জাতীয় সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ ছিল। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ আরো ২৫ বছর বাড়ানো হয়।
ওই সময়ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের পক্ষে বলা হয়, ‘যে পদ্ধতিতে সংরক্ষিত আসনের নারীদের নির্বাচিত করা হয় তা যথাযথ নয়। তাদের কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। ক্ষমতাও নেই। তাদের পদগুলো আলংকারিক। সংরক্ষিত নারী আসনকে কার্যকর করতে হলে তাদের সরাসরি নির্বাচনের আওতায় আনতে হবে।
একই সঙ্গে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাহলেই নারীদের সংরক্ষিত আসনের বিধান কার্যকর হবে এবং জনগণ এর সুফল পাবে।’ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সে সময় এই কথাগুলোই কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন।
গত ২৩ নভেম্বর নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে নারী নেত্রীরা সাংবাদিকদের বলেন, তারা সংসদে সত্যিকারের নারী প্রতিনিধিত্ব চান। কোটাভিত্তিক আসন চান না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বলেছি, সংসদের নারী আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫০ করা হোক। এতে প্রতি দুই আসনের জন্য একটি নারী আসন করা হোক এবং সেখানে সরাসরি নির্বাচন হোক। এই দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।’
ওই দিন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নারীরা সরাসরি নির্বাচন চেয়েছেন। অনেকে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চেয়েছেন।