বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসা পর্যটনে প্রধান গন্তব্য ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। কিন্তু স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় গুরুতর রোগী ছাড়া আর কোনো বাংলাদেশিকে মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে না ভারত।
এতে বাংলাদেশিরাও খরচ ও চিকিৎসা মান বিবেচনায় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কের দিকে ছুটছেন।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়।
এতে ভারতে স্বাস্থ্যসেবা নিতে তাদের বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে ছয় হাজার কোটি টাকা) ব্যয় হয়।
ভারতে যত বিদেশি নাগরিক চিকিৎসা করাতে আসেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই সর্বাধিক।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব ভারতের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সংগঠন জানাচ্ছে, বাংলাদেশের রোগী আসা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। যেসব হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল, তাদের কাছে এটা বড় ধাক্কা।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ত্রিপুরা নয়, বাংলাদেশি রোগী আসা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় ভারতের সব হাসপাতালেই তার প্রভাব পড়ছে।অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কলকাতার উডল্যান্ডস হসপিটালের প্রধান নির্বাহী অফিসার রূপক বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আগে প্রতি মাসে গড়ে ভারতের মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হতো ২০ থেকে ২৫ হাজার।
এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে এক হাজার। তা-ও মূলত নতুন রোগী নয়, পুরনো রোগী।
যাদের চেকআপ ইত্যাদি আছে, তারাই ভিসা পাচ্ছেন। তাই পুরো ভারতের হাসপাতালশিল্পের ওপরই বড় ধাক্কা এসেছে।’ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল গোষ্ঠী মনিপাল হসপিটালসের পূর্বাঞ্চলীয় চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. অয়নাভ দেবগুপ্তর কথায়, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে বাংলাদেশে অস্থিরতার কারণে সেখান থেকে বহু রোগী ভারতের হাসপাতালগুলোতে আসতে পারছেন না। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও বহির্বিভাগ এবং রোগী ভর্তি কমে গেছে।’
বাংলাদেশি রোগীরা সাধারণত ট্রান্সপ্লান্ট, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস ও অনকোলজির মতো চিকিৎসার জন্য ভারতে যান।
বাংলাদেশের রোগী যারা আগে চিকিৎসার জন্য ভারত যেতেন, সেই রোগীরাই এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তুরস্কে যাচ্ছেন।বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ থেকে ২১ লাখ রুপির ব্যবসা কম হচ্ছে বলে ভারতীয় পত্রিকা ‘এই সময়’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।