তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুই দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও বেঁচে নেই তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয় আটকে পড়া আবদুল আলিম মুয়াইনিকে।
তখনো তার সারা শরীর ধূসর ধুলায় আচ্ছাদিত, এক চোখ ফোলা, পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন, দরকার ছিল চিকিৎসকদের সেবা। এদিকে ভূমিকম্পে অপর ক্ষতিগ্রস্ত দেশ সিরিয়ায় প্রথম সহায়তা পৌঁছচ্ছে তিন দিন পর। কংক্রিট ও ইটের বড় একটি স্ল্যাবের নিচ থেকে উঁকি দিয়ে উদ্ধারকারীদের উদ্দেশ্যে ?দুর্বলভাবে ইশারা করছিলেন আবদুল আলিম মুয়াইনি।
তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুই দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে একজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও বেঁচে নেই তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।
সেখানে দুই দিন আটকা পড়ে ছিলেন তিনি। ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের হতাই প্রদেশে থাকা তার বাড়ি মাথার ওপর ভেঙে পড়ার পর দুই দিন পেরিয়ে যায়। কাছেই নিথর হয়ে পড়ে আছে তার স্ত্রী এসরা। উদ্ধারকারীরা তার কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের যে কয়েকটি অঞ্চল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, হতাই তার একটি। সেখানেই স্বেচ্ছাসেবকরা আবদুল আলিমকে জীবিত উদ্ধার করলেও তার পরিবারের অন্যদেরকে বাঁচানো যায়নি।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের হতাই প্রদেশে থাকা তার বাড়ি মাথার ওপর ভেঙে পড়ার পর দুই দিন পেরিয়ে যায়।
উদ্ধার পাওয়ার পর আবদুল আলিম মুয়াইনিকে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। আবদুল আলিমের সঙ্গে রয়টার্সের আলোকচিত্রী উমিতের সরাসরি কথা না হলেও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা তার দুই বন্ধু জানান, আবদুল আলিমের বাড়ি সিরিয়ার হোমসে।
গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে চলে আসার পর বিয়ে করেন তুর্কি নারী এসরাকে। তাদের দুই মেয়ে, মেহসেন ও বেসিরা। আবদুল আলিমকে উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগে, কয়েক ঘণ্টা পর উমিত সেখানে ফিরে ঘটনাচক্রে তাকে (আবদুল আলিম) ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা দেখেন।
আবদুল আলিমের বাড়ি সিরিয়ার হোমসে।
সারা শরীর ধূসর ধুলায় আচ্ছাদিত, এক চোখ ফোলা, পানিশূন্যতায় ভুগছিলেন, তার দরকার তখন চিকিৎসকদের সেবা। তবে তিনি বেঁচে ফিরেছেন। যেটা পারেনি, পরিবারের অন্য সদস্যরা। মাটিতে তখন কম্বলে ঢাকা ছিল তিনটি মৃতদেহ—এসরা, মেহসেন আর বেসিরার।
এদিকে ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর প্রথম ত্রাণ সহায়তা পৌঁছল সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে। বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাব আল-হাওয়া সীমান্ত ক্রসিং পেরিয়ে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটিতে জাতিসংঘের ত্রাণ বাহী একটি গাড়ি বহর পৌঁছেছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এদিকে ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর প্রথম ত্রাণ সহায়তা পৌঁছল সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে।
এএফপির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, তিনি তাঁবু ও স্বাস্থ্য পণ্য নিয়ে ছয়টি ট্রাককে তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় ঢুকতে দেখেছেন। সীমান্ত কর্মকর্তা মাজেন আলুশ জানিয়েছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পের আগেই এসব ত্রাণ পৌঁছানোর কথা ছিল।
জাতিসংঘ এর আগে জানিয়েছিল, তারা আশ্বাস পেয়েছে, বৃহস্পতিবার তুরস্ক থেকে একমাত্র অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মাধ্যমে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় প্রাথমিক সহায়তা পৌঁছাবে। তুরস্কে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের (ওসিএইচএ) প্রধান সানজানা কাজী জানান, জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত সাহায্য কার্যক্রম ফের চালু হয়েছে।
সীমান্ত কর্মকর্তা মাজেন আলুশ জানিয়েছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পের আগেই এসব ত্রাণ পৌঁছানোর কথা ছিল।
তিনি বলেন, ‘স্বস্তি পাচ্ছি যে, এমন চাপের সময়ে আমরা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় জনগণের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আশা করি, এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ গত সোমবার তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে আঘাত হানে চলতি শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। প্রলয়ঙ্করী ঐ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ২১ হাজার ছাড়িয়েছে।
ডিএস